সর্বশেষ খবর

6/recent/ticker-posts

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) প্রযুক্তির ইতিহাস


 আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) প্রযুক্তির ইতিহাস অনেক দীর্ঘ এবং উত্থান-পতনের। নিচে সংক্ষেপে কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ মাইমিলি টাইমলাইন আকারে লিখছি।

### প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ধারণা (প্রাচীনকাল–১৯০০)

- খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতকে হোমারের ইলিয়াডে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের কথা আছে।

- ১৩শ শতাব্দীতে রজার লালি (Roger Bacon) ও আলবার্টাস ম্যাগনাস কথা বলতে পারে এমন যন্ত্রের ধারণা দেন।

- ১৭৩৮ সালে জ্যাকুয়েস দ্য ভকানসনের হাঁস আকৃতির অটোমেটন (যা খেতে ও মল ত্যাগ করতে পারত) বিখ্যাত হয়।

### আধুনিক AI-এর জন্ম (১৯৪০–১৯৫৬)

- ১৯৪৩: ওয়ারেন ম্যাককালক ও ওয়াল্টার পিটস নিউরাল নেটওয়ার্কের প্রথম গাণিতিক মডেল প্রকাশ করেন।

- ১৯৫০: অ্যালান টিউরিং তার বিখ্যাত প্রবন্ধ “Computing Machinery and Intelligence” প্রকাশ করেন এবং টিউরিং টেস্ট প্রস্তাব করেন।

- ১৯৫৬: ডার্টমাউথ কনফারেন্স (John McCarthy, Marvin Minsky, Claude Shannon, Allen Newell প্রমুখ) – এখানেই প্রথম “Artificial Intelligence” শব্দটি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার হয়। এটাকে AI-এর জন্মসাল বলা হয়।

### প্রথম সোনালী যুগ ও প্রথম AI Winter (১৯৫৬–১৯৭৪)

- ১৯৫৭: ফ্র্যাঙ্ক রোজেনব্ল্যাট পার্সেপট্রন (প্রথম নিউরাল নেটওয়ার্ক) আবিষ্কার করেন।

- ১৯৬৬: জোসেফ ওয়াইজেনবাউম ELIZA চ্যাটবটি তৈরি করেন (প্রথম চ্যাটবট)।

- ১৯৬৯: মারভিন মিনস্কি ও সেমুর পেপার্টের বই “Perceptrons” প্রকাশিত হয়, যেখানে একক স্তরের পার্সেপট্রনের সীমাবদ্ধতা দেখানো হয়। এর ফলে নিউরাল নেটওয়ার্ক গবেষণায় ফান্ডিং কমে যায়।

- ১৯৭৪–১৯৮০: প্রথম “AI Winter” – ফান্ডিং ও আগ্রহ কমে যায়।

### এক্সপার্ট সিস্টেম ও দ্বিতীয় সোনালী যুগ (১৯৮০–১৯৮৭)

- ১৯৮০-এর দশকে এক্সপার্ট সিস্টেম (MYCIN, Dendral, XCON) জনপ্রিয় হয়।

- জাপানের “Fifth Generation Computer Project” (১৯৮২) বিশ্বে AI-তে বিনিয়োগ বাড়ায়।

- ১৯৮৬: ব্যাকপ্রোপাগেশন অ্যালগরিদম পুনরাবিষ্কার (Rumelhart, Hinton, Williams) – নিউরাল নেটওয়ার্ক আবার ফিরে আসে।

### দ্বিতীয় AI Winter (১৯৮৭–১৯৯৩)

- এক্সপার্ট সিস্টেমের ব্যয় বেশি ও সীমিত কার্যকারিতার কারণে আবার ফান্ডিং কমে।

### পুনরুত্থান (১৯৯৩–২০১১)

- ১৯৯৭: IBM-এর Deep Blue চেস গ্র্যান্ডমাস্টার গ্যারি কাসপারভকে হারায়।

- ২০০৬: জিওফ্রে হিন্টন “Deep Belief Networks” প্রকাশ করেন – ডিপ লার্নিং যুগের সূচনা।

- ২০১১: IBM Watson জিওপার্ডি! কুইজে মানুষকে হারায়।

### ডিপ লার্নিং বিপ্লব (২০১২–বর্তমান)

- ২০১২: AlexNet (ক্রিজেভস্কি, হিন্টন, সুৎস্কেভার) ImageNet প্রতিযোগিতায় বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয় – ডিপ লার্নিং বিপ্লব শুরু।

- ২০১৪: GANs (Generative Adversarial Networks) – Ian Goodfellow।

- ২০১৫: AlphaGo (DeepMind) গো খেলায় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন লি সেডলকে হারায় (২০১৬)।

- ২০১৭: ট্রান্সফরমার আর্কিটেকচার (Vaswani et al.) – আজকের সব বড় ভাষা মডেলের (GPT, BERT, LLaMA, Grok ইত্যাদি) ভিত্তি।

- ২০২২: ChatGPT প্রকাশ – AI সাধারণ মানুষের হাতে চলে আসে।

- ২০২৩–২০২৫: GPT-4, Claude 3, Gemini, Grok, LLaMA 3, DeepSeek ইত্যাদি মডেল মাল্টিমোডাল (টেক্সট+ইমেজ+ভিডিও) ক্ষমতা দেখায়। AGI-এর দিকে দ্রুত এগোচ্ছে।

### বর্তমান অবস্থা (২০২৫)

আজ AI সর্বত্র – চ্যাটবট, ইমেজ জেনারেশন (Midjourney, DALL·E, Flux), ভিডিও জেনারেশন (Sora, Runway), কোডিং (GitHub Copilot, Devin), রোবটিক্স (Figure, Tesla Optimus), ওষুধ আবিষ্কার, স্বয়ংক্রিয় গাড়ি ইত্যাদি।

সংক্ষেপে বলা যায়, AI-এর ইতিহাস হলোক উত্থান-পতন, অতি আশা ও হতাশার। কিন্তু ২০১২ থেকে ডিপ লার্নিং ও বিশাল ডেটা+কম্পিউটিং পাওয়ারের কারণে এটা আর থেমে নেই – বরং দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ