ইসলামে পরিবার গঠন পদ্ধতি
মানুষ সামাজিক জীব। পরিবার সামাজিক জীবনের প্রথম স্তর। এটি সমাজের মৌলিক ও ক্ষুদ্রতম সংগঠন। পরিবার সমাজের কেন্দ্রবিন্দু তথা প্রাণকেন্দ্র । মানুষের পারিবারিক জীবনের মাধ্যমেই সামাজিক জীবনের সূচনা হয়ে থাকে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সৃষ্টি ও সমন্বয়ের মাধ্যমে গড়ে উঠে পরিবার। সমাজবিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে পরিবার হচ্ছে,
“মোটামুটিভাবে স্থায়ী এমন একটি সংঘ-সংস্থা;
যেখানে সন্তানাদি বা সন্তানবিহীনভাবে স্বামী-স্ত্রী একত্রে বসবাস করে। পরিবারই সমাজ-রাষ্ট্রের ভিত্তি। সমাজ অনেকগুলো পরিবারেরই সমষ্টি। বহুসংখ্যক পরিবারের সমন্বয়ে গড়ে উঠে সমাজ। সমাজের এ-বিকশিত-সুসংগঠিত রূপই হলো রাষ্ট্র। পরিবার প্রথার অবর্তমানে সমাজ টিকতে পারে না। সামাজিক ও তমুদ্দুনিক সুস্থতার জন্য পরিবার অপরিহার্য।
বিয়েপরবর্তী নারী-পুরুষের মাধ্যমে যে-দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়; তাতে সূচনা হয় তাদের পারিবারিক জীবন। তাছাড়া,
মানুষ সামাজিক জীব বিধায়,
তারা একে অপরের সাথে মিলেমিশে থাকতে চায়, এজন্য পরিবারগঠন একান্ত আবশ্যক। তাই, সমাজের সৌন্দর্য্য পরিবারের সৌন্দর্য্যরে উপর নির্ভরশীল। পরিবার যত সুশৃংখল হবে; সমাজও সে অনুপাতে তত পরিমাণ সুশৃংখল হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে উত্তম পরিবার গড়ে উঠার জন্য
নিম্নোক্ত জরুরী মূল্যবোধ থাকা আবশ্যক
ক. একটি নিরাপদ-সুস্থ ও আশ্বস্তকারী আবাসস্থল হবে ।
খ. নারী-পুরুষের বিশেষ প্রবৃত্তিকে সুপথে পরিচালনার স্থান হবে।
গ. দয়া-ক্ষমার মত মানবিক গুণাবলি লালনকরার স্থান হবে ।
ঘ. ভিতর-বাইরের অসুবিধা থেকে সুরক্ষিত আশ্রয়স্থল হবে।
ব্যক্তিজীবনের মানবীয় গুণাবলি পারিবারিক জীবন-পরিবেশে উত্তমরুপে অনুশীলিত হলে এর প্রভাবে সামাজিক জীবনও উত্তম ও সুশৃংখল রুপে গড়ে উঠে। ব্যক্তিজীবনের সুখশান্তি ব্যতিরেকে পারিবারিক জীবনে যেভাবে সুখ-শান্তি কল্পনা করা যায় না; সেভাবে পারিবারিক জীবনের সুখ-শান্তি ব্যতিরেকেও সামাজিক জীবনে সুখ-শান্তি কল্পনা করা যায় না। প্রকৃতপক্ষে,
মানুষের শান্তিস্বস্তিও নিরাপত্তার জন্য পরিবার দূর্গ স্বরূপ। এ-দূর্গটি অক্ষুন্ন ও সুরক্ষিত থাকার উপরেই নির্ভর করে সামাজিক ও জাতীয় জীবনের নিরাপত্তা,
সুস্থতা ও স্থিতি। সামাজিক জীবনের বিভিন্ন দিক বিভাগকে সর্বাঙ্গ সুস্থ করতে হলে পারিবারিক জীবনকে সুস্থ কাঠামোতে গড়ে তোলা আবশ্যক। অন্যথায়,
সমাজসংস্কার ও আদর্শ জাতিগঠনের কোনো প্রচেষ্টাই সফল হতে পারে না বরং সর্বপ্রকার প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হতে বাধ্য। এসব কারণে ইসলাম সুস্থ পারিবারিক জীবনের প্রতি গুরুত্বারোপ করে। ইসলামের বিধিবদ্ধ আইন ও এর নির্দেশিত ব্যবস্থা হচ্ছে,
সুনির্দ্দিষ্ট পদ্ধতিতে বৈবাহিক সর্ম্পক স্থাপনের মাধ্যমেই কেবল পরিবার ও পারিবারিক জীবন গঠিত হবে। নীতিসিদ্ধ বৈবাহিক সম্পর্ক ব্যতিত অন্য কোনোভাবে গঠিত দাম্পত্য সম্পর্ককে যুক্তিসংগত কারণেই ইসলাম নিন্দা,
প্রত্যাখান বা অস্বীকার করে। ইসলামের দৃষ্টিতে,
বিবাহপূর্ব নারী-পুরুষের সহাবস্থান ও চরম ঘৃণ্য ও নিন্দনীয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে গঠিত পরিবার স্থায়ী ও সংরক্ষিত হওয়ার ক্ষেত্রে রীতিসিদ্ধ বৈবাহিক সম্পর্কই একমাত্র পন্থা।
বিবাহ নারী-পুরুষের মাঝে সামাজিক পরিবেশ ও সমর্থনে শরী‘য়া মোতাবেক অনুষ্ঠিত এমন এক সম্পর্ক স্থাপন; যার ফলে দু’জনের একত্রে বসবাস ও পরস্পর যৌনসম্পর্ক স্থাপন সম্পূর্ণরূপে বৈধ হয়ে যায়। এদ্বারা পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য অবশ্য পালনীয় হয়ে দাড়ায়। অর্থাৎ বিবাহ সমাজ-সংস্কৃতি ও ধর্ম স্থিরিকৃত এমন এক চুক্তি; এর মাধ্যমে একজন পুরুষ ও একজন নারী একত্রে বসবাস করার চুড়ান্ত ক্ষমতা অর্জন করে। এ বিয়ে পরিবারগঠনের এমাত্র পদ্ধতি, এবিয়ের মাধ্যমেই পরিবারের গোড়াপত্তন হয় এবং বিয়ে দ্বারাই রচিত হয় পরিবার। ইসলামের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও বিধিব্যবস্থা হচ্ছে, মানুষের অর্ন্তালোকে যে প্রেম-ভালবাসা, দয়া-অনুগ্রহ, স্নেহ-বাৎসল্য ও সংবেদনশীলতা স্বাভাবিকভাবেই বিরাজমান; তার কার্যকারিতা ও বাস্তব রূপায়ন বৈবাহিক বন্ধনের মাধ্যমেই সম্ভব হতে পারে। ইসলাম বিবাহ ও বৈবাহিক সর্ম্পককে পরিবার গঠনের একমাত্র পদ্ধতি রূপে বিধিবদ্ধ করেছে। বিবাহ খোদাপ্রদত্ত বিধান। এটা জৈবিক, মনস্তাত্তিক, সামাজিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক ক্রমবিকাশে ঘরবাধা, ভালোবাসা ও ব্যক্তিত্বের চাহিদা পুরণ করে। পরিবারের ধারাবাহিকতা রক্ষা ও অপরাপর দলবদ্ধতার অস্তিত্ব বজায় রাখায় বিবাহের ভূমিকা অনন্য।
BKevj Avey bvCg
wkÿK, Bwe, Kzwóqv
‡gvevBj 01718695753
B-‡gj: ikbalabunaeem@gmail.com
0 মন্তব্যসমূহ