সর্বশেষ খবর

6/recent/ticker-posts

ইসলামে দৃষ্টিতে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার ও মর্যাদা (Mutual rights and dignity of husband and wife in Islam)

 



ইসলামে দৃষ্টিতে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার মর্যাদা

মানুষের পারস্পরিক সর্ম্পকের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সর্ম্পক একটি গুরুত্বপূর্ণ সর্ম্পক। তাদের পরস্পরের মধ্যে একের উপর রয়েছে অন্যের বিশেষ অধিকার। এসম্পর্কে রাসূল . বলেন-তোমরা জেনে রেখ, তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের উপর অধিকার আছে। এবং তোমাদের স্ত্রীদেরও অধিকার আছে তোমাদের উপর। তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের যে অধিকার আছে তা হলো, তোমরা যাদের অপছন্দ কর, তারা তোমাদের শয্যা মাড়াঁবে না। অনুরূপভাবে, তোমরা যাদের অপছন্দ কর, তাদেরকে তোমাদের ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি দিবে না। জেনে রেখ, তোমাদের উপর তাদের অধিকার হলো, তাদের খাওয়া পরিধানের ব্যাপারে মহানুভবতা অনুগ্রহমূলক আচরণ করবে।(সহীহ মুসলিম, হা. ২১৩৭) মহানবী . আরো বলেন-তোমরা স্ত্রীদের কল্যাণকামী হও। (সহীহুল-বুখারী, হা. ৪৭৮৭) প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন-নারীদের তেমনিভাবে ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে, যেমনিভাবে আছে তাদের উপর পুরুষদের।  নারীদের উপর পুরুষদের মর্যাদা রয়েছে।(সুরা আল-বাকারা: ২২৮)

স্বামীর অধিকার মর্যাদা: মহান আল্লাহ তদীঁয় রাসূল . এর মর্যাদার পর একজন স্ত্রীর কাছে তার নিকট তার স্বামীর মর্যাদা সর্বাধিক। স্বামীর নির্দেশ দ্বীন-শরীয়া পরিপন্থি না-হলে তার উপর অন্য কারো নির্দেশকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না। মহান আল্লাহ  তদীঁয় রাসূল . এর পর স্বামীর অধিকার মর্যাদা সকলের উর্ধ্বে। বৈধ কাজে স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর উপর ফরয (আবশ্যকীয় কর্তব্য) নফল ইবাদত অপেক্ষা স্বামীসেবা করা উত্তম ইবাদত। কারো স্বামী গৃহে অবস্থানকালে স্ত্রী তার অনুমতি সাপেক্ষে নফল ইবাদত করা উচিত। কেননা, এমনটি হতে পারে স্ত্রীর নফল ইবাদত পালনের কারণে স্বামীর সেবা-যত্নে বিঘ্ন ঘটবে। মনে রাখতে হবে, স্ত্রী মর্যাদাগতভাবে সাধারণত স্বামীর চেয়ে বেশি বা সম মর্যাদাসম্পন্ন হতে পারে না। মহানবী . বলেছেন-আমি কাউকে সাজদা করার হুকুম  করলে স্ত্রীদেরকে তাদের স্বামীকে সাজদা করতে বলতাম। কেননা, আল্লাহ তাদের উপর স্বামীদের অধিকার নির্ধারণ করে দিয়েছেন। (সুনানু আবু দাউদ, হা. ১৮২৮) আবূ হুরায়রা রা. বলেন- ”রাসূল . এর কাছে এক ব্যক্তি আরয করল, কোন্ স্ত্রী উত্তম? তিঁনি বললেন, সে স্ত্রী উত্তম; যার প্রতি স্বামী নযর করলে সে খুশি করে দেয়, যে স্বামীর কথামত চলে, নিজের ব্যক্তিগত ব্যাপারে স্বামীর বিরুদ্ধাচরণ করে না এবং স্বামীর মতের বিরুদ্ধে তার সম্পদ খরচ করে না। (সুনানু-আবুদাউদ, হা ১৪১৭) উম্মু সালমা রা. বলেন-নবী করীম . বলেছেন, কোনো মহিলা পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত আদায় করলে, রমযান মাসের সিয়াম পালন করলে, নিজের সতীত্ব রক্ষা করলে স্বামীর কথা মান্য করলে, সে মহিলা জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।(মুসনাদু-আহমদ, হা. ১৫৭৩ ) রাসূল . আরো বলেছেন-কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে রাতে শয্যায় ডাকলে, স্ত্রী স্বামীর ডাকে অস্বীকৃতি জানালে  এদ্বারা স্বামী ক্রুদ্ধ হলে, ভোর হওয়া পর্যন্ত ফেরেস্তারা তার উপর অভিসম্পাত করতে থাকে। (সাহীহুল-বুখারী, হা. ২৯৯৮)

 একথা অনস্বীকার্য যে, আল্লাহ প্রদত্ত সহজাত যোগ্যতা কর্মক্ষমতার কারণে স্ত্রীদের তুলনায় পুরুষদের অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়, আবার স্ত্রীরাও অনেক সময় সম্পূর্ণ অকেজো স্থবির হয়ে পড়ে, তখন সে অপরের সাহায্যে সক্রিয় সহযোগিতার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। সন্তান গর্ভে ধারণ, প্রসব, স্তন্যদান, শিশু লালন-পালন প্রভৃতি বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হয়। বিখ্যাত মুহাদ্দিস শাহ ওয়ালী উল্লাহ্ দিহলবী  . নারীদের উপর পুরুষদের প্রাধান্য সম্পর্কে লিখেছেন-স্বামীকে তার স্ত্রীর উপর পরিচালক ব্যবস্থাপক নিযুক্ত করা একান্ত আবশ্যক। স্ত্রীর উপর -প্রাধান্য স্বভাবসম্মতও বটে। কেননা, পুরুষরা জ্ঞানবুদ্ধিতে অধিক সুদক্ষ প্রতিরোধের কাজে সুদৃঢ়। অন্ন-বস্ত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা করেন বলে,  স্ত্রীর উপর পুরুষের -নেতৃত্ব প্রাধান্য হওয়া বাঞ্চনীয়।

স্ত্রীর অধিকার মর্যাদা:  স্ত্রীর উপর স্বামীর যেমন অধিকার স্বীকৃত, তদ্রুপ স্বামীর উপরও স্ত্রীর অধিকার স্বীকৃত। বিশিষ্ট ছাহাবী মুয়াবিয়া কুশাইরী রা. বলেন-আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল .,  আমাদের উপর আমাদের স্ত্রীদের কী অধিকার রয়েছে? জবাবে রাসূল . বললেন- তুমি যা খাবে; তাকেও তা খেতে দিবে। তুমি যা পরিধান করবে; তাকেও তা পরিধান করতে দিবে। তার মুখের উপর প্রহার করবে না। তাকে মন্দ কথা বলবে না এবং ঘরের ভিতর তার সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করবে না।(সুনানু-আবুদাঊদ, হা. ১৮৩০) হাদীসটির চতুর্থ বিষয় হচ্ছে, স্ত্রীকে মন্দ ভাষায় গালমন্দ করবে না। এধরনের কথাবার্তা পারিবারিক জীবনের মাধুর্যকে বিনষ্ট করে। কাজেই ইসলাম এধরনের কথাবার্তা পছন্দ করে না। এছাড়াও স্ত্রীর অন্য একটি অধিকার হচ্ছে, কমপক্ষে প্রতি চারদিন অন্তর অন্তত একদিন স্ত্রী তার স্বামীকে কাছে পাবে। স্ত্রীর অন্ন-বস্ত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা করা স্বামীর প্রধান কর্তব্য। বিষয়ে মহান আল্লাহ্ বলেনÑপিতার কর্তব্য যথাবিধি তাদের (সন্তানের মায়েদের) ভরণÑপোষণ করা। (সুরা আলÑবাকারা:২৩৩) অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ্ বলেন-বিত্তবান তার সাধ্যমত এবং বিত্তহীন তার সামর্থানুযায়ী বিধিমত খরচপত্রের ব্যবস্থা করবে। (সুরা আলÑবাকারা: ২৩৬) অপর আয়াতে মহান আল্লাহ্ বলেন-বিত্তবান নিজ সামর্থানুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবন উপকরণ সীমিত; সে ব্যক্তি আল্লাহ্ যা দান করেছেন; তা হতে ব্যয় করবে। (সুরা আত্-তালাক: )  কোনো স্ত্রী থেকে তার স্বামী কাংখিত আনুগত্য না-পেলে, তাকে আল্লাহ্র বিধি-বিধানের কথা বুঝাবে। স্ত্রী এতে এগিয়ে না এলে, রাত্রিকালীন শয্যাগ্রহণে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন কর পদ্ধতি অবলম্বন করবে। তাতেও ঠিক না-হলে তাকে হালকা প্রহার করবে। তবে মুখের উপর প্রহার করবে না। ফিক্হবিদগণ বলেছেন, চারটি কারণে স্ত্রীকে প্রহার করার অধিকার স্বামীর আছে যেমন, স্ত্রীর সাজসজ্জা না-করা অথচ স্বামী তা চায়, বিনা কারণে সহবাসে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন, সালাত আদায় না-করা, স্বামীর বিনা অনুমতিতে ব্যতিত ঘরের বাহিরে যাওয়া। পরিশেষে বলা যায়, ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক যে অধিকার মর্যাদা প্রদান করেছে পৃথিবীর কোনো সভ্যতা বা ধর্মে এর নজির নেই।

.

ইকবাল আবু নাঈম

শিক্ষক, ইবি, কুষ্টিয়া

মোবাইল ০১৭১৮৬৯৫৭৫৩

-মেল: ikbalabunaeem@gmail.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ