প্রথম রমজানের করণীয় বিষয়সমূহ

রমজান মাস মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র ও বরকতময় মাস। এই মাসের প্রথম দশ দিন হলো "রহমতের দশক", যেখানে আল্লাহর অশেষ রহমত লাভের সুযোগ থাকে। তাই প্রথম রমজানে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় রয়েছে, যা পালন করলে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা সহজ হবে।


১. রমজানের প্রস্তুতি নেওয়া

প্রথম রমজানে আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত, যেন পুরো মাসটি সঠিকভাবে কাটাতে পারি। প্রস্তুতির কিছু ধাপ:
মন থেকে নিয়ত করা: আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখার দৃঢ় সংকল্প করা।
ইবাদত ও আমল পরিকল্পনা: কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া, নফল নামাজ, সদকা ও অন্যান্য ইবাদতের জন্য পরিকল্পনা করা।
পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: শারীরিক ও আত্মিকভাবে নিজেকে পরিশুদ্ধ করা।


২. রোজা রাখা ও সঠিকভাবে পালন করা

রমজানের মূল ইবাদত হল রোজা। রোজা পালনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরি:
সঠিক সময়ে সেহরি খাওয়া: হাদিসে এসেছে, সেহরি খাওয়ায় বরকত রয়েছে। তাই দেরি করে হলেও সেহরি খাওয়া উত্তম।
সিয়ামের নিয়ত করা: রোজার নিয়ত করা সুন্নত, তবে মনে রাখলেই যথেষ্ট।
বেহুদা কথা ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা: মিথ্যা, গিবত, পরনিন্দা, ঝগড়া-বিবাদ থেকে দূরে থাকা জরুরি।
ইফতার সময় হলে দ্রুত ইফতার করা: হাদিস অনুযায়ী, বিলম্ব না করে সময় মতো ইফতার করা সুন্নত।


৩. নামাজ ও তারাবিহ পড়া

📌 ফরজ নামাজ: প্রথম রমজান থেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথভাবে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
📌 তারাবিহ নামাজ: প্রতিরাতে ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজ পড়ার চেষ্টা করা উচিত।
📌 তাহাজ্জুদ ও নফল নামাজ: রমজানে রাতের শেষ অংশে তাহাজ্জুদ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।


৪. কুরআন তেলাওয়াত বৃদ্ধি করা

📖 কুরআন নাজিলের মাস হলো রমজান। তাই প্রথম রমজান থেকেই নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত করা গুরুত্বপূর্ণ।
✅ প্রতিদিন অন্তত ১ পারা পড়ার চেষ্টা করা।
✅ অর্থ ও তাফসিরসহ কুরআন বোঝার চেষ্টা করা।
✅ রাতের সময় কুরআন তেলাওয়াত করা বেশি বরকতময়।


৫. দোয়া ও ইস্তেগফার করা

প্রথম রমজান থেকেই বেশি বেশি দোয়া করতে হবে, কারণ এটি রহমতের সময়।
☑ আল্লাহর রহমত চাওয়া
☑ গুনাহ মাফ চাওয়া
☑ জান্নাত প্রার্থনা করা
☑ দোয়া কবুলের সময় (ইফতারের সময়, সেহরির সময়, তাহাজ্জুদে) বেশি বেশি দোয়া করা।


৬. দান-সদকা করা

💰 সদকা ও দান-খয়রাত করা:
📌 অভাবীদের সাহায্য করা
📌 মসজিদ-মাদরাসায় দান করা
📌 ইফতার করানো (যার মাধ্যমে প্রচুর সওয়াব অর্জন হয়)


৭. ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা ও গুনাহ থেকে বাঁচা

✅ রমজানের প্রথম দিন থেকেই আমাদের চরিত্র সংশোধনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
❌ গীবত, মিথ্যা, হারাম কাজ ও সকল ধরনের খারাপ আচরণ পরিহার করতে হবে।
✅ ধৈর্য ও বিনয়ী হওয়ার চেষ্টা করা।
✅ পরিবারের সঙ্গে ভালো আচরণ করা।


উপসংহার

প্রথম রমজান থেকেই আমাদের উচিত এই মাসের রহমতকে কাজে লাগানো। ইবাদত, কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া, দান-সদকা, সৎ কাজ ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা—এসবের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারব।

🕌 আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজান মাসের রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন! 🤲